কুবি প্রতিনিধি।।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেয়ায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) নৃবিজ্ঞান বিভাগের ১০ম আবর্তনের শিক্ষার্থী জহুরা মিমকে নিয়ে অশালীন, কুরুচিপূর্ণ ও মানহানিকর মন্তব্য করেছেন কুবি শাখা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুর বিশ্বাস। এসময় তিনি শিবির কর্মী বলেও মন্তব্য করেন। এর প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
আজ শনিবার (১৩ জুলাই) বেলা সাড়ে এগারোটায় বঙ্গবন্ধু ভাষ্কর্যের পাদদেশে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
জানা যায়, গত ১১ জুলাই আন্দোলনরত কুবি শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশি হামলার ঘটনায় নারী শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে অংশগ্রহণ করে। সেখানে জহুরা মিম ফ্রন্ট লাইনে থেকে আন্দোলন করতে দেখা যায়। গত (১২ জুলাই) আমিনুর বিশ্বাস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে জহুরা মিমকে নিয়ে একটি পোস্ট দেন। যেখানে এই নারী শিক্ষার্থীকে শিবির ট্যাগসহ নানা কুরুচিপূর্ণ, অশালীন ও মানহানিকর মন্তব্য করেন। এবং এর প্রতিবাদ করায় মিমসহ তার এক সহপাঠীকে ‘টেনে ছিঁড়ে ফেলার’ হুমকিও দেন।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, এই আমিনুর বিশ্বাস বিগত দিনেও আমাদের অনেক নারী সহপাঠিকে উত্যক্ত করেছেন। তার বিরুদ্ধে সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগ আজকের নতুন নয়। আমরা শুনেছি তিনি নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি। তার এমন আচরণগুলো আমাদের মহান মুক্তিযোদ্ধা পরিবারগুলোর জন্য লজ্জাকর। কোটা আন্দোলনে অংশ নেয়ায় একজন নারী শিক্ষার্থীকে নিয়ে তিনি যে মন্তব্যগুলো করেছেন সেগুলো সত্যিই নিন্দনীয়। তার মাধ্যমে আর যেন কোনো শিক্ষার্থীকে হেনস্তা হতে নাহয় সেজন্য আমরা দ্রুত এর বিচার দাবি করছি। প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি থাকবে তাকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হোক।
নৃবিজ্ঞান সোসাইটির সহ-সভাপতি মামুন মজুমদার বলেন, আমরা এখানে উপস্থিত হয়েছি মিমের বিপক্ষে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের প্রতিবাদে। ফেসবুকে আমিনুরের পোস্ট দেখলে বুঝার উপায় নাই যে সে কোন শিক্ষার্থী হতে পারে। শিক্ষার্থীরা আজ এদের কারণে নিরাপদ না। আজ কেন আমাদের মানববন্ধন দাড়াতে হবে? প্রশাসন কি এসব দেখে না? যৌক্তিক কোন আন্দোলনে অংশ নিলে কিভাবে সে শিক্ষার্থী শিবির হয়ে যায়? শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সমর্থন দিতে না পারলে চুপ থাকবেন কিন্তু অন্যকে হুমকি, হেনস্তা করার সাহস আসে কোত্থেকে?
এসময় তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উপস্থিতিতে কিভাবে পুলিশ শিক্ষার্থীদের উপর গুলি চালায়? আপনারা তো মেরুদন্ডহীন৷
এসময় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জহুরা মীম বলেন, আমিনুর কয়েক মাস ধরেই আমাকে হোয়াট্সঅ্যাপ, মেসেঞ্জারে নক করে যাচ্ছেন। আমি যেন উনার দলের হয়ে রাজনীতি করি কিন্তু আমি তো রাজনীতি করি না। আমি সবসময় উনাকে ইগনোর করেছি। ১১ জুলায় কোটাবিরোধী আন্দোলন যখন প্রক্টর স্যারের উপস্থিতিতে আমাদের উপর হামলা হয়। ঐ দিন রাতে ফেসবুকে কমেন্টে এসে সে আমাকে গালাগালি ও বাজে ভাষায় কথা বলতে থাকে। এক পর্যায়ে সে আমার এক সহপাঠীকে ফোন দিয়ে হেনস্তা, হুমকি দেয় যার রেকর্ড আমার কাছে আছে। পরদিন সকালে সে আমাকে নিয়ে পোস্ট করে আমি নাকি শিবির করি। এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, মিথ্যা কথা। তিনি একজন মানসিক ভারসাম্যহীন। আমি ইতিমধ্যে আমার বিভাগের শিক্ষকদের অবগত করেছি। শিক্ষকরা আমাকে যে নির্দেশনা দিবেন সে অনুযায়ী আমি পরবর্তী পদক্ষেপ নিবো। প্রয়োজনে তার নামে আমি মামলা করবো।
প্রসঙ্গত, আমিনুর বিশ্বাস দাবি করেন তিনি কুবি শাখা ছাত্রলীগের একজন পদপ্রার্থী। অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডে সরাসরি অংশগ্রহন করার। গত ২৮ এপ্রিল উপাচার্যের নির্দেশে একজন শিক্ষককে সরাসরি হামলা করেন। পরে শিক্ষকরা তার বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেন। ছাত্রলীগ এবং উপাচার্য আবদুল মঈনকে নিয়ে সংবাদ প্রচার করায় বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকদেরকে হেনস্তা ও মারার হুমকি দেন।
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page